তোমাদের লোভাতুর জিভ টেনে ছিঁড়ে নেব আমি
অলীক উচ্চারণে যারা নিজেদের ভেবে থাকো কবি
ভূমিতে শিকড়হীন; যে বৃক্ষ বাড়েনি তার মূলের মাটিতে
সেই শিল্পতরু আজ আমাদের প্রয়োজন নেই।
আমাদের জীবনের জন্যে আজ শিল্প চাই, ফিরে চাই মাটির আঘ্রাণ
তপ্ত অঙ্গীকার বুকে নিয়ে আমি সেই শোভন আগুন আজ
ছড়াব সময়ে।

তোমাদের মাথা থেকে দৃঢ় হাতে খুলে নেব কবির শিরোপা
তোমাদের মুখে আমি থুথু দিই, থুথু দিই, থুথু দিই
এতটুকু সম্মান দিতে আজ রাজি নই, মুখচোরা ভীরুটে শিক্ষক,
বেজন্মা-দালাল বুদ্ধিজীবী তোমার মাথার খুলি আমি
আঘাতে উড়িয়ে দেব।

এই আমার বিংশতি যুবক বুকের অগ্নিময় উত্তুঙ্গ বিক্ষোভ থেকে
নতুন অস্ত্রের মতো ঝলোমলো এই যৌবনের বহ্নিতেজ থেকে
আমি হ্যান্ডগ্রেনেডের মতো আমার প্রচণ্ড রুদ্ররোষ ছুড়ে দিই
এইসব বুদ্ধিজীবী লেখক শিক্ষক কবি ঘুণে-ধরা রাজনীতিকের প্রতি।

বুর্জোয়া অর্থনীতিকের ডাটা আমি দু’পায়ে মাড়াই
কারা বলে ব্যর্থ মাটি, এই জল, ব্যর্থ এই মানুষ-লাঙল?
এই শস্যের বৈভবে খাদ্যঘাটতির কথা
আমি মানি না, মানি না।

সাম্রাজ্যবাদ আর তার পরিকল্পনার বুকে লাথি মারি
আজ আমাদের শুধু সাহসী মানুষ চাই, শুধু সাহসী মানুষ চাই।
একজন ক্রুশবিদ্ধ কোমল যিশুর মতো দৃঢ় মহান শিক্ষক
গনগনে আগুনের ফুলকির মতন দৃপ্ত লেলিহান বুদ্ধিজীবী
ফুলের সুষমা আর বারুদের বিস্ফোরণ বুকে নেয়া কবি চাই
আজ আমাদের।
আমাদের পাঁজরের হাড়ে হাড়ে জেগে থাকে ব্যর্থতার গ্লানি
আমাদের অপমান বেদনা হতাশা আর ব্যথার বিক্ষোভ
একদিন গোপন ট্রিগারে তার খুঁজে নেবে রক্তাক্ত প্রতিশোধ।

ভালোবাসি নদী, জল, ফুল, পাখি, কাকলি সুবাস
অথচ জীবনে আজো ফিরে তো এল না সেই সবুজ সুস্থতা
সেই হাত স্নেহমাখা, মায়ের দরদী চোখ তারা আজ হারাল কোথায়?

আমার স্বপ্নের জন্যে পাথরে পাথরে জানি চূড়ান্ত সংঘর্ষ হবে
সংঘর্ষের ভাষা তাই হবে জানি পাথুরে কঠিন আর নিটোল নির্মোহ।

বড়বেশি বাজে, এই বুকে বড়বেশি লাগে
অতন্দ্র প্রহর কাটে, কাটে রাত, বিনিদ্র জীবন,
কত ঘাম রক্ত অশ্র“ ঝরে যায় হায় বিনাশী খরায়
তবু কিছু কিছু মানুষের প্রাসাদের স্বপ্ন ভাসে চোখে
অলীক স্বপ্নের রথে চড়ে তারা পেতে চায় রঙিন জীবন।

এ-জাতির অধ্যাপক, কৃষিবিদ, শল্যবিদ, চিকিৎসক, প্রকৌশলী,
প্রযুক্তিবিদ, বিজ্ঞানী
সুহাসিনী বিমানবালার অধরের হাসি দেখতে দেখতে
ভিনদেশে পৌঁছে যায়- ইউরোপ, আমেরিকা, আজকাল
বড়বেশি মধ্যপ্রাচ্যে।

আমাদের এককালীন বামপন্থীরা বর্ষার শুরুতে দ্যাখো
ইলিশ ঝাঁকের মতো উঠে যায় লঙ্কা-দ্বীপে, কেমন উজান ঠেলে ঠেলে
গণতন্ত্র পরিহিত শয়তান সাম্রাজ্যের অস্ত্র নেচে ওঠে বারবার
সুযোগ পেলেই দ্যাখো জনতার কণ্ঠে সেই অক্টোপাস চেপে ধরে টুঁটি।

না, বোঝে না সংস্কৃতি আমাদের অশিক্ষিত নেতা
বরং নির্বাচন ভালো বোঝে,
প্রেমের স্বভাব ভুলে অর্থের প্রাচুর্য চায় নষ্টা প্রেমিকারা
তীর্থের কাকের মতো মাতাপিতা বড় বড় সুযোগের প্রত্যাশা করেন,
অধ্যাপক নোট লিখে বাজার গরম ক’রে লুফে নেয় কাঁচা কাঁচা টাকা
টোপ গিলে বুদ্ধিজীবী সহজে বিবৃতি দেয় জনতার বিপক্ষ কাতারে।

কোনো ছাত্র আজ আর আর্তের সেবার জন্যে ডাক্তারি পড়ে না
আমাদের ইঞ্জিনিয়ারদের আর বুঝি কোনো মহৎ উদ্দেশ্যই নেই!
সবাই শোষক কিংবা শাসকের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ দালাল
গ্রামে গ্রামে স্বনির্ভরতার বক্তৃতা করে শহরে এসেই শান্তিবাহিনীর
সাদা ঠোঁটে চুমু খায়, চাটে পুঁজ স্বজনের হাড়।

আমাদের মৃত্যুর জন্যে আজ কোনো পরিতাপ নেই
আমাদের জন্মের জন্যে আজ কোনো ভালোবাসা নেই
আমাদের ধ্বংসের জন্যে আজ কোনো প্রতিকার নেই
আমাদের সবকিছু আজ শুধু ছলনার, শুধু আজ ব্যর্থতার
ক্লেদ নিয়ে আসে।

আজকে এখানে একজন শিক্ষক জন্মাক
আজকে এখানে একজন বুদ্ধিজীবী থাক
আজ নবজন্ম হোক এদেশের লেখক কবির
আর তারা অন্ধকারে ঝলসিত আগ্নেয়াস্ত্রের মতন
হোক স্পর্ধিত, স্পর্ধিত হোক
আজ তারা স্পর্ধিত হোক।

১.৯.৭৮
সিরাজগঞ্জ