‘মোহন রায়হানের রক্ত চাই’
ঘোষণা হয়েছে রাজদণ্ডাদেশ
শহরে নগরে সেটা সবাই শুনেছে।

সর্ত প্রহরী ঘোরে শহরের চারিদিকে
হোটেলে, চা-স্টল, আর সিনেমাহলের কাউন্টারে
গোয়েন্দা বিভাগ প্রতিমুহূর্তে পেতে রাখে শার্দূল-চক্ষু।
কলেজের তরুণ-তরুণী ক্লাস ছেড়ে আমতলা ছুটে আসে
দেখতে দেখতে প্রতিবাদসভা গর্জে ওঠে কলেজের মাঠে
বন্দুকের নল উঁচিয়ে পুলিশভ্যান তেড়ে আসে
না, পুলিশভ্যানে আজ অন্য প্রতিকৃতি… দেশে এখন সামরিক শাসন।

তবু কৃষ্ণচূড়ার মতন ধ্বনি ফোটে মুখে ‘সমরজান্তা নিপাত যাক’
অফিস বারান্দা থেকে সৌমমূর্তি শিক্ষকেরা নেমে আসলেন
যেন লক্ষ যিশু
শান্ত অথচ ভরাট দৃঢ়কণ্ঠে নির্দেশ দিলেন ছাত্র ছাত্রী তোমরা সবাই
সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াও; দেখবে যেন কিছুতেই আমাদের পবিত্র
স্বাধীন এই মাটি
কলঙ্কিত না হয় স্বৈরাচারের বুটের নিচে।

জয়দেবপুরের গ্রেনেড-সবল ভাস্কর্যের মতো সে কী সুন্দর সুদৃশ্য
দৃশ্যমান প্রতিরোধ
ছাউনিতে ফিরে যায় সশস্ত্র সৈন্যরা, চোখেমুখে আক্রোশের
নিষ্ফল আগুন।

ওদিকে মোহন রায়হান শহরের কালো পিচঢালা ছেড়ে
চলে গেছে ওর সবুজ সোনালি গ্রামে
কলার পাতার ফাঁকে বাঁকা ঠোঁটের মতন উঠেছে হিজল চাঁদ

সজনে গাছের নিচে গনগনে চুলোটির ধারে মার কাছে ব’সে
শিশুর মতন
জিয়ল মাছের ঘন ঝোলে মেখে পরম তৃপ্তিতে খাচ্ছে আউশের ভাত।

বাড়িভর্তি গ্রামের সরল কৃষকেরা আজ তাকে দেখতে এসেছে
কুমার সন্ধ্যার অপরূপ জোছনার আলো-আঁধারিতে কী সুন্দর
প্রতিজ্ঞায় দীপ্ত-হয়ে-ওঠা সেইসব মুখ।

২৫.২.৭৭
চিশতিয়া প্রেস, ঢাকা