অবিশ্রান্ত বৃষ্টিপাতে ভেসে যাওয়া ঢাকায়
প্রবল বর্ষণ আর ঝোড়ো হাওয়া উপেক্ষা ক’রে
ভেজা শালিকের মতন তোমার কাছে আসা।
এই ঝড়-ঝঞ্ঝা বর্ষণে তুমি আসবে কি আসবে না কর্মস্থলে
আশা-নিরাশার দোলাচলে তবু প্রচণ্ড ইচ্ছাই জয়ী হয়
যদি তোমাকে না পাই ফিরে আসার যন্ত্রণা কতখানি
আর যদি পেয়ে যাই মেঘমন্দ্রিত অঝোর
-এমন দিনে তারে বলা যায় এমন ঘনঘোর বরষায়”
সে আনন্দের তুলনা করতে করতে পৌঁছে যাই।
তুমি নেই ঘরময় তবু তোমার অস্তিত্বের ঘ্রাণ ছড়িয়ে আছে
টেবিলে তোমার হাতব্যাগ, টিফিনবক্স বলে দিল
তুমি আছ, আশেপাশে অন্য কোথাও হয়তো এমন উদাস
মেঘমল¬ারে খোশগল্পে মেতে উঠেছ কলিগের সঙ্গে।
শূন্য কক্ষে বসতে চমকে দেখি তোমার পিছন জানালায়
কী অপূর্ব দৃশ্যপট দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ বনভূমি
মনে হল যেন ওইখানে ঝড়ে জলে হাওয়ায় হাওয়ায়
নৃত্যরত পত্রালির সঙ্গে হিরন্ময় পেখম খুলে নাচ্ছ
উর্বশী বনময়ূরী, একদা ঝড় তোলা নিপুণ নৃত্যপটিয়সী।
কল্পনায় ফিরে যাই পঁচিশ বছর পিছনে যেন সেই তুমি
বর্ষণমুখর সুশোভিত হরিৎ মঞ্চে, অবিরাম নেচে যাচ্ছ প্রাচীন মুদ্রায়
নৃত্যের তালে তালে তোমার শরীর থেকে একে একে
ঝরে যাচ্ছে তন্তুবাস, তুমি যেন এক নগ্ন মৎস্যকুমারী এইমাত্র
উঠে এসেছ সমুদ্র থেকে কী অদ্ভুত অনন্য তোমার
সুগঠিত নৃত্যরত শিল্পশোভা; আমি মুগ্ধ বিস্ময়ে দেখছি
বৃষ্টিস্নাত নৃত্যরত আদি সৌন্দর্য সুডৌল মানবময়ূরী
পরাবাস্তব ধ্যানভঙ্গ ক’রে তুমি এসে জানালে আনন্দিক অভ্যর্থনা,
বাইরে প্রবল বৃষ্টি হৃদয়ে তুমুল ঝড় মেঘ বৃষ্টি বজ্রপাত
সাবুজিক দৃশ্যপটে মুখোমুখি বাস্তবে তোমাকে দেখি
না, বয়স এখনো পারেনি কেড়ে নিতে অনির্বাণ আকর্ষণ
এখনো অ¤¬ান অপরাজিতা তুমি!
এখনো ছড়ায় কী মায়াবী দ্যুতি তোমার নরম গালের টোল
সপ্তর্ষির মতন এখনো উজ্জ্বল জ্বলজ্বলে তোমার সজীব চোখ
এখনো দুর্নিবার রহস্যে তরঙ্গিত হয়ে ওঠে তোমার সুস্মিত ঠোঁট।
দুপুর গড়িয়ে যায় স্মৃতি-বিস্মৃতির নানা গল্পে
আধ বিকেলের থৈ থৈ জলে যেন নৌবিহারে ভেসে যাই
যন্ত্রযানে, অতঃপর চারচাকা থেমে গেলে রিকশার হুডের নিচে
আশ্রয় নেয়া ছাড়া উপায় থাকে না আর সেটুকুই মহাসুখ অন্তত কিছুটা সময়
নিবিড় সান্নিধ্যে আসার পরমানন্দে শিহরিত তনুমন
কেঁপে কেঁপে নেচে ওঠে মেঘ-চেরা বিদ্যুচ্চমকের মতন।
আহা! যদি এরকম দেওয়ার ডাকে ঘর ছেড়ে ঝড় জল বজ্রপাতে
তুমুল বৃষ্টিতে ভিজে দিকহারা শাম্পানের মতো আলিঙ্গনবদ্ধ দুজনে
আজীবন ভেসে যাওয়া যেত!