তোমাকে নয়, তোমার সন্তানকে নয়,
আমার মা’কে দেখি আমি তোমার মধ্যে।

মাত্র ন’মাসের ব্যবধানে যে ভ্রƒণ
জল ও হাওয়ার মতন তোমার রক্তে;
মানুষের পূর্ণাবয়ব প্রাপ্তি হয়েছে
তোমার জরায়ুর নিরাপদ দুর্গে , কুরে কুরে খেয়েছে
তোমার নিটোল লাবণ্য; সে আজ ভূমিষ্ঠ; পৃর্থিবীর
আলোতে এসেছে। সে আজ হাত পা নাড়ে, সশব্দে কাঁদে
চিৎকার করে তোমার স্তন দাবি করে, খামচে ধরে।

যেন সে লাটসাহেব, যখন-তখন মলমূত্র ত্যাগ,
খাওয়া, ঘুমানো কিম্বা চিৎকারই তার কাজ।
হুজুরের সুখ-অসুখ, আরাম-আয়েশের জন্য
ব্যস্ত সবাই; তার একচিলতে অর্থহীন হাসির জন্য
তুমি কী উদ্বিগ্ন, উৎকণ্ঠিত মাতা।

কিন্তু তোমার কতটা যন্ত্রণা, কতটুকু কষ্ট, কোনোদিন কি সে বুঝবে?
এখনো তোমার কোমরে, তলপেটে রক্তক্ষরণের ব্যথা
সারা শরীরে প্রচণ্ড প্রদাহ, নির্গমনের পথ ভে’জা স্যাঁতসেঁতে রক্তাক্ত,
উঠে দাঁড়াতে পারো না। চোখের কোণ কালি, ফ্যাকাশে বিবর্ণ মুখ,
প্রতিদিন আগুনে সেঁকে সেঁকে মৃত্যুর হিমস্পর্শ থেকে রক্ষা করা হয়
তোমাকে,
তবু তাকে কী গভীর মমতায় আঁকড়ে রাখো বুকে, সারারাত্রি জেগে থাকো।
তার পাশে ঘুমোতে পারো না, সারাদিন ঘুম ঢুলঢুলু তবু তার মুখে
তুলে দিতে হয় অর্বাচীন মাড়ির কামড়ে রক্তাক্ত মাই।
তোমাকে নয়, তোমার নবজাতককে নয়
আমার মা’কে দেখি আমি তোমার আদলে।

আর ইচ্ছা করে দৌড়ে গিয়ে
মা-জননীর পায়ের নিচে লুটিয়ে প’ড়ে
অশ্র“সিক্ত ক্রমাগত বলতে থাকি :
মাগো আমায় মাফ ক’রে দাও
মাফ ক’রে দাও
মা….গো…..