‘পায়ে বাঁধা যায় গলায় পরা যায় না’
এ সত্য কি আমোঘ নয় নটিনী?
সতীত্বের কসম খেয়ে বল্ নটি, বল্?
কী করে আজ অস্বীকার করবি, ঘুঙুরের প্রকৃত মর্যাদা
কী করে এখন এড়িয়ে যাবি হৃদয়ের ছলাকলা?

নর্তকী! রাত বারোটার পরে ইন্দ্রিয়ানুভূতি শেষে
কামনার হলুদ স্নায়ু নিভে গেলে, ফুরালে নাচের সভা
শিল্পপতির শয়নকক্ষে; নীলাভ নিয়নের নিচে
ক্যাবারক্লান্ত তুইতো তোর, সুরভিত বাগানের দরজা খুলে
মেলে দিবি সমস্ত ফুলের সৌরভ-পাপড়ি,
মদের তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে ক্রমশ একটি মদমত্ত হাতি
লম্বা শুঁড়ের ডগায় দুমড়ে-মুচড়ে কুসুমরাজিরে তোর
খেলবে পাগলা- খেলা তুমুল
তোর আজীবন স্বপ্নের জরায়ুর ভেতর।

কিশোরী বয়স রঙিন কাচের ফ্রেমে বাঁধানো জীবন;
আকাশের চাঁদের সাথে তুলনা করিস আপনার স্নিগ্ধতা
ভাবিস আহা! কত চাতক পাখি চেয়ে আছে জোছ্নার দিকে
বাগানের সদ্যফোটা ফুলটি দেখে মনে পড়ে আমিই বুঝি,
আহা! কত ভ্রমর গুঞ্জন করে চারিপাশে, শুষে নিতে চায় অমৃত মধু।

রঙিনী, অথচ আমিতো জানি সবি
রাত শেষে সবিতার চোখ উজ্জ্বল হ’লে
বাথরুমের কবোষ্ণ জলে ধুয়েমুছে গ্লানি
নাচ্নেওয়ালি! সর্বাঙ্গ কি পবিত্র হবে?
স্বৈর্গিক মহিমা দীপ্ত হবে কি
পাপ পঙ্কিল কলঙ্কিত গোপন কাহিনী?

হস্তিনী! তোর বিশাল নাভি, প্রসার নিতম্ব
উদ্ধত স্তনের বাহার আর কতকাল দীর্ঘ হবে?
করাল দাঁতের কামড়ে বিপর্যস্ত চুইংগামের মতন?
ঘাতক বয়স ছুঁয়ে দেবে কোঁকড়ানো চুল
রঙিন দিন পালাবে জীবন ছেড়ে বিদ্যুতের মতো দ্রুত
তুই শুধু প’ড়ে রবি পরিত্যক্ত আন্ডারওয়ারের মতো,
মিথ্যাবাদিনী। তোর সমস্ত প্রতারণার স্মৃতি বিষধর সর্পের মতন
আমৃত্যু দংশিত করবে তোরই কুটিল হৃদয়
স্মৃতি শুধু ছুরি হবে বেদনার
মরণেও শান্তি নাই, নাই রে তোর!

আমি, আমরা সকলেই জানি, কোরবানির গরুর মতো
দামি লিপস্টিক, শ্যাম্পু, শাড়ি অলংকারের
কসাই দোকানদারের কাছে (যার চোরাচালানির পয়সা থাকবে অনেক)
তুই বিক্রি হবি অনায়াসে; সে সুপুষ্টি তোর আছে;
কিন্তু একজন কবি যে উদাসীন এইসবে, ফিরিয়ে দেবেই তোকে
বলবেই ‘পায়ে বাঁধা যায় গলায় পরা যায় না।’

কেননা কবিরা কখনোই একজন নারীর শুধু
মরালগ্রীবা, উন্নতস্তন, পদ্মনাভি, কুসুমনিতম্ব, তরলযোনির সন্ধানী নয়;
কবিরা চায় সবকিছুর ঊর্ধ্বে নারীদের প্রেমময়ী অকৃত্রিম মন

তোর কি তা আছে ছিনালী? না হলে ফিরিয়ে দিলাম বলেই কি
ভেনেশিং কালারের মতন মুহূর্তে মুছে ফেলে ভালোবাসার সব রঙ
রাতারাতি ভুলে যাবি, অন্যরকম অন্য দানবী হবি?
পোষা কুকুর লেলিয়ে দিবি শান্তিপ্রিয় মানুষের বাগানে?
আমিতো জনমেও ভাবি না একজনের প্রেম, একজন না নিলেই
তাকে খুন করতে হবে, গিলাগিল্লা, কুৎসা রটনা করতে হবে তার নামে,
তুই তাই ক’রে ক’রে গোল্লায় গেলি
যেহেতু দেশের লোক ভাল ক’রেই জানে;
চোরের মায়ের বড় গলা।

অতএব দুঃখ নিই না বুকে
শুধু ভাবি নারী কি বিস্ময়!
ভালোবেসে চুমো খেলে বুকে নিলে, শুধু ভালোবাসে।
আর আমিতো তাই নির্ভয়ে পথ হাঁটি ইস্পাতের মত
চেতিয়ে লোমশ বুক এগিয়ে যাই আমার সুনির্দিষ্ট
সবুজের দিকে, আমার লাল পতাকার দিকে।

কবিরা জানে একজন খারাপ মেয়ে মানুষের কাছ থেকে
শিক্ষা নিয়ে কতবড় ভালোমানুষ হওয়া যায়;
আগুনে পোড়া সোনার মতন আমিও তাই
তোর কুৎসার আগুনে পুড়ে পুড়ে হৃদয়ের যত জঞ্জাল
অনন্ত সোনার মানুষ হ’তে পারব সুনিশ্চয়।

আমি তো জানি ভালোবাসার মানে শুধু
রক্তিম অধরে চুমো খাওয়া নয়
ধবল স্তনের মাঝে নিমগ্নতা জীবন নয়
ভালোবাসা আত্মসমর্পণ, আত্মঅহম নয়

ভালোবাসা তো আজীবন হৃদয়ের পাশাপাশি অবস্থান
ভালবাসা তো বদমেজাজী, জেদী মেয়ের
কোমর-দোলানো নাচ্না নয়
ভালোবাসা তো নূপুরের রিনিঝিনি নয়।

ভালোবাসা আলাদা কিছু, অন্যরকম অন্যকিছু।