উৎসর্গ: ১৯৮২-৮৩-র ঐক্যবদ্ধ ছাত্র-আন্দোলনের ব্যতিক্রম দিশারী:
মুনির উদ্দিন আহমেদসভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ

না, না, এ আমার পলায়ন নয়,
এ সশস্ত্র শহরে তোমাকে একা ফেলে রেখে
কুয়াশার ট্রেনের মতন চলে যাচ্ছি আমি,
আমার পেছনে সারি-সারি, বাড়ি-ঘর, এভিন্যু-ভবন,
প্রসাদ-উদ্যান, রিক্সা-বাস, টেম্পো, স্বয়ংক্রিয় গাড়ি আর অসংখ্য মানুষ।
যুদ্ধাহত সৈনিকের মতো নিঃশব্দে-নীরবে আমি চলে যাচ্ছি

ধাবমানে যন্ত্রযানে; কিন্তু এ আমার পলায়ন নয়,
চতুষ্কোণ কাচের ভেতরে আমি ফের বিষণœ চোখের পাতা তুলে তাকালাম
কিন্তু কিছুতেই চেনা মনে হল না অনেক চেনা পথ, ঘাট,
কিছুতেই মনে করতে পারছি না এই সেই স্বপ্নপুরী, ভালোবাসার শহর।

জলপাই জিপের মহড়া মোড়ে মোড়ে জ্বলজ্বলে চোখে
অলিগলি উঁচিয়ে মেশিনগান ছুটে যাচ্ছে সামরিক কনভয়;
যেন গৃহযুদ্ধে ছেয়ে গেছে দেশ। প্রধান বিচারালয়ের সমুখে এসে
চমকে উঠল বুক এই সেই বধ্যভূমি, রক্তের বন্যায় ডুবেছিল
জনতার ঢল, কালোপিচ, কার্জন হলের গাছের পাতায় পাতায়
এখনো সুতীব্র বারুদের গন্ধ, রক্তমাখা যেন মৃত¯তূপ শিশু একাডেমি,
ধু-ধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। টি.এস.সি-র মোড়ে এসে ফের একপলক
তাকাতে হু হু করে ওঠে মন; ওইতো রোকেয়া হল মাত্র দুইদিন আগে
প্রফুল্ল প্রতীক্ষা ছিল; বিকেলের রোদে ঝলমল সেইসব সবুজাভ মুখ
ছিন্ন মালার মতো কে আজ কোথায়? হেমন্তের পাতাঝরা গানে
কেউ আর নেই, পাতাকুড়ানীও প্রাণভয়ে চলে গেছে।
লাইব্রেরির সবুজ জমি, ইউক্যালিপ্টাস, বট নিঃসঙ্গ ব্যথায়
প্রতিদিন প্রতীক্ষায়, প্রতীক্ষায় কাটে না সময় আর,
কলাভবনের প্রতি করিডোর, ক্যাফেটেরিয়া, মধুর কেন্টিন
খাঁ-খাঁ শূন্যতায় কাঁদে প্রতিদিন নিঃশব্দ অশ্র“তে, প্রশাসন
ভবনের মাঠে যুগলে স্মৃতি দখল করেছে সামরিক তাঁবু।
এ সন্ত্রস্ত শহরে তোমাকে একা ফেলে রেখে
চুপিসারে আমি চলে যাচ্ছি একা একা
এ আমার পলায়ন নয়; প্রতিশোধের হিংস্রতা বুকে নিয়ে
একাত্তরের যুবক আমি ফের ফিরে যাচ্ছি গ্রামে।
আমি ফিরে আসব আবার কোমরে কার্তুজ, করতলে
তাজা গ্রেনেড, অব্যর্থ নিশানায় ট্রিগারে আঙুল, চোখেমুখে
হিংস্র গনগনে শ্রেণী-হিংসার সহিংস আগুন বুকে ফসলের ঘ্রাণে
আমি ফিরে আসব আবার, ফিরে আসবই
তুমি কি নেবে না টেনে বুকে?