লাভলী, তুমি আমাকে ভালো না বেসে খুব ভালোই করেছ
যদি ভালোবাসতে আমার হত না কিছুই তবে
প্রতিদিন সন্ধ্যার পূর্বেই ফিরে আসতাম ঘরে
দরজা জানালা আটকে দিতেম ভূত প্রেত আর অন্যান্য
পেটিবুর্জোয়া মেয়েদের ভয়ে

পিন্নি, তুমি ভালোবাসলে যাওয়া হত না বস্তিতে আর
তুমি ভালোবাসলে যেতাম না তো কৃষকসভায়
তুমি ভালোবাসলে গেরিলাযুদ্ধ প্রিয় হত না আমার
তুমি ভালোবাসলে সমাজতন্ত্র চাইতেম না হয়তো

রিনি, তুমি ভালোবাসলে সাধনা হত না কম্যুনিস্টের
তুমি ভালোবাসলে বুলেট দেখে ভীত হত বুক
তুমি ভালোবাসলে ভুলে যেতে পারতাম না হয়তো লোভ

সুবর্ণা, তুমি ভালোবাসলে বাড়ি গাড়ি কাঁচা অর্থ টি.ভি. ফ্রিজ
বাসি ফুল তরকারির মতন তোমার শরীর খুব প্রিয় হত
তুমি ভালোবাসলে আমি ‘ভালোবাসা’ই ভুলে যেতাম একদিন
পারমাণবিক স্মৃতি

তুমি কী করে আমাকে ভুলে যাবে
ভুলবে আমার প্রেম
জলের ভেতরে
অম্লজান ও উদ্যানের মতো একদা মিশেছিলাম
আমরা অখণ্ড একপাত্র জলের মতন
ক্ষুরের কাছে থেকে তার ধারকে পৃথক করা
যেমন অসাধ্য মানুষের তেমনিই
অসম্ভব ছিল একদা আমার কাছে থেকে তোমাকে বিচ্ছিন্ন করা

মুছে ফেলতে পারবে এই নাম? পাথরের পাঁজরে খোদিত এই
নাম বুকের গভীর থেকে? এই নামায়ন মুছে নিতে কঁকিয়ে
উঠবে হাড়, খুবলে খুবলে ঝরে পড়বে মাংসের মতো তাজা ইট,
তোমার ঘরের পেছন দেয়াল

বিছানায় বাথরুমে কিচেন কিংবা ড্রইংরুমে ছাদে সম্মুখের
উঠোনে ট্যাক্সিতে সিনেমায় চীনে রেঁস্তোরায় আয়নার সামনে
কসমেটিক্সের বাক্সে শরচ্চন্দ্রের উজ্জ্বল বাগানে ঠাকুরের গানে
আমার না- ফোটা মনের ভীরু সে কলি ফোটাবে কীভাবে তুমি?

তুমি কী করে ভুলে যাবে সেইসব টুকরো টুকরো স্মৃতি
স্বচ্ছ করতোয়া যেভাবে উঠছে দুলে দুলে
তোমার বাড়ির পাশে
তাজমহলের মতো গড়ে উঠেছে যা রক্তে সত্যে হৃদয়ের
তিলে তিলে
সবকিছু তার ভুলেও তুমি আমাকে পারো না ভুলতে সখি

এ জীবন সত্য ছিল স্মৃতি ছিল তুমিও তো ছিলে
একদিন কিশোর-কিশোরী ছিল, হাতে ছিল বিচিত্র লজেন্স
জোছনার মাঠের ফল এসে তুমি দিয়েছিলে উদাসীন
এই উড়নচণ্ডির হাতে
একদিন ফল ছিল এখন সন্তান তুমি তোল কার কোলে?

এখনও নিশ্বাস আছে পৃথিবীতে
বাতাসের স্বরে বাজে সেইসব নীল মাঠ দুপুরের গান
বেদনা আহত পাখি বারবার বলে যায় ওই বুকে আমিও ছিলাম