রক্ত দিয়েছে আমার স্বজন আমার মানুষ যারা
তনুতে শোণিতে তাইতো আজকে রুদ্র নাচন জাগে।
হিংস্র ক্রুদ্ধ আগুন জ্বলেছে লোহুতে আমার মাঝে
প্রতিশোধ নাচে বুকের তিমিরে তপ্ত তৃষিত প্রাণ।

স্বজনের কাছে জন্মের ঋণ রয়েছি অঙ্গীকারে
এই পেশি চিরে ফালি-ফালি করে শুধে যাব সেই ঋণ।

শস্যের লোভে আমার ভায়েরে হত্যা করেছে যারা
যারা নিছে কেড়ে বোনেরে আমার নগ্নদেহের মোহে
তাদের ভুলিনি, ভুলব না, ক্ষমা করব না কোনোদিন।

রক্ত আমার নৃত্যে মেতেছে লোনা দরিয়ার মতো
বুকের দুকূলে গজরায়ে ওঠে রক্তনদীর স্রোত।
আমার ভায়ের হত্যার প্রতিশোধ নেব আমি আজ
আমার বোনের অত্যাচারের প্রতিশোধ নেব আমি।

মা আমার কেঁদে ফেরে আমি ঘরে ফিরি নাই।

রাত্রির ঘুম স্মৃতি কেড়ে নেয়
জোনাকির মতো আমাকে জাগায়
হেলাল, সকিম, কোরবান, ফরহাদ
তোমাদের মুখ ভেসে ওঠে চোখে
সেলিম, সালাম, নেজাবত সর্দার
মোকাদ্দেসের কথা মনে পড়ে যায়
স্বৈরাচারের বুলেটের ঘায়ে রক্তে ভিজেছে বুক
রক্তে মাখানো প্রতিবাদী সেই মুখগুলো আজ মনে পড়ে যায় শুধু।

আমি কি কখনো এমন ছিলাম, কখনো এমন!
ফুলের মতন কিশোর কোমল হৃদয়ে আমার
জ্বলে ওঠে আজ আগুনের হিংস্রতা।
রক্ত! রক্ত! শুধুই দেখেছি রক্তের ঝ’রে পড়া
হিংস্র হয়েছি দেখে সে রক্তপাত;
ক্রুদ্ধ হয়েছি, ক্ষুব্ধ হয়েছি, হয়েছি লড়াকু আজ
বারুদে জ্বলেছে আমার শান্তি রাত
বাতাসের স্বরে আজ শুধু শুনি সাথিদের চিৎকার।

রক্ত দিয়েছে আমার স্বজন, আমার মানুষ যারা।

মা আমার তুই কতকাল আর কাঁদবি, কাঁদাবি প্রাণ!
কতকাল পরে ঘরে ফিরে যাব আমি
আর কতদিন পরে!
আর কতোকাল এই যুদ্ধের, এই রক্তের বন্যায় ভেসে যাব?
মাগো কবে আমি প্রতিশোধে হাত রাঙিয়ে রক্তে
ফিরে যাব তোর স্নিগ্ধ আঁচল নীড়ে;

মাগো কবে এই চোখদুটো থেকে ক্লান্তিগুলোন খুলে
তোমার বুকের উদার জমিনে ঘুমাব অবোধ শিশু!

২১.২.৭৫
পাবনা কারাগার, পাবনা