মরহুম ফরহাদ হোসেনকে

ক্ষমা নয়, অভিশাপ দাও পিতা
ব্যর্থ, পরিাজিত, অক্ষম অযোগ্য, সন্তানকে
অভিশাপ দাও তুমি।
তোমার স্বপ্নের শৈলাবাড়ি (মূলত ব্রাহ্মণবয়ড়া) গ্রোয়েন
খুবলে খুবলে গিলে নিল সংক্ষুব্ধ যমুনা;
শত বছরের বসত, ভিটা-মাটি-ঘরবাড়ি, হাট-বাজার, পালান, গোয়াল, লাউমাচা
আম, জাম, কাঁঠাল, সবেদা, আতা, লেবু, কামরাঙা, নারকেল গাছ, অসহায় পশুপাখি
কেঁদে কেঁদে নিমেষেই রুপান্তরিত হল নীল যমুনায়।

দ্যাখো, যেখানে তোমার পদচিহ্ন, শ্রম, ঘাম, মেধা, স্বপ্ন, হৃদয়নিসৃত ভালোবাস
জমে ছিল প্রতিরক্ষা বাঁধের প্রতীক হয়ে, সেখানে এখন কিছু নেই
শুধু জল, শুধু পানি, সহস্র চোখের অশ্র“ টলমল
হায়! সর্বনাশী যমুনার খলখল ক্রূর হাসি!

ধস, শুধু ধস নামে বাপ-দাদার বৈলাখড়মের দাগ আর মা-দাদির
নরম হাতের নিকোনো উটোন ঝুপঝাপ, ঝুফূাপ ধসে পড়ছে
স্রোতের করাত টানে, যেন খসে যাচ্ছে আমার দুখিনী মায়ের
বিশীর্ণ বুকের একটি একটি করুণ পাঁজরের হাড়, গণধর্ষিতার চাপ চাপ
রক্তস্রোতের মতন ভেসে যাচ্ছে হাজার বছরের প্রাচীন লোকালয়,
মাঠ, ঘাট, শস্যক্ষেত, নাই নাই কোথাও কিছু নাই শুধু ধু-ধু বিস্তীর্ণ জলরাশি…
মনেও হয় না এখানে একটু আগেই ছিল শিশুদের কোমল পায়ের ছাপ
সবুজের চিহ্ন, আগুনে পুড়লে তবু থাকে ছাইভস্ম পোড়ামাটি,
পোড়া জিনিসের চিহ্ন কিন্তু নদীর ভাঙনে থাকে না কিছুই, কোনো স্মৃতি
শুধু হাহাকার, রান্না আর বুকফাটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়া!

দ্যাখো, ছুটছে মানুষ দিকবিদিক দিশেহারা অসহায় নরনারী শিমু
কারো হাতে হাড়িকুঁড়ি, বাক্সপেটরা মেষ সম্বলটুকু রক্ষার আকুল প্রয়াসে
ছুড়ে ফেলে কাঁখের শিশু, কে কোথায় ছুটছে জানে না
কোথায় স্বামী সন্তান, মা বাবা ভাই বোন, স্বজন-কে খোঁজে কাকে।
এই সর্বনাশা দুনিয়া?
কী করুণ আর্তনাদে ভেঙে পড়ে আকাশের খিলান, ঝোড়ো মেঘ
আর ভয়াল জলের ঘূর্ণিতে তছনছ মানববন্ধন, ঘরের চাল, বেড়া, খুঁটি
কাঁধে ও মাথায় নিয়ে ছুটছে দ্রাখো নিরুদ্দেশে নিরুপায় আদম-সন্তান
যাবে কোথায়, কার কাছে, কে দেবে নতুন বসতি গড়ার একটুকরো মাটি, আশ্রয়?
জানে না কিছুই, জানে না সে, তবু ছুটছে, ছুটছে.. যেন পেছনে
ধাওয়া করছে পাকিস্তানি মিলিটারির মতন নদীর ভাঙন,
সেবার তুব ঘুরে এসে ফিরে পেয়েছিল ফেল-যাওয়া বাড়ি-ঘর-জমি-জিরাত
কিন্তু এবার তো ফেরার উপায় নাই!
হায়রে! আল্লাহ্ ভগবানের ঘর মসজিদ-মন্দিরও মানে না যমুনা সর্বগ্রাসী;
বুক আছড়ায় বৃদ্ধা ফুলমতি।

ক্ষ নয়, ক্ষমা নয় অভিশাপ দাও পিতা!
রক্ষা করতে পারিনি তোমার একান্ত কীর্তি
সিরাজগঞ্জের মূল রক্ষাকবচ তোমার স্বপ্নবাঁধ।
পারব না বাঁচাতে তোমার খোকশাবাড়ি হাসপাতাল
কওমী জুট মিল, শালুয়াভিটা ক্লে াজার!
সব শেষ হয়ে যাবে, শেষ হয়ে যাবে ইলিয়ট ব্রিজ
ভাসানী, সিরাজী, যাবদ, রজনীকান্ত, হিলালী, শত মুক্তিযোদ্ধার বুকের রক্তøাত
অগণিত কৃতীজনের স্মৃতিধন্য শৈশব, কৈশোর, যৌবনের
সপ্নিল প্রিয়তম সিরাজগঞ্জ।

সব শেষ হয়ে যাবে, শেষ হয়ে যাবে
অপ্রতিরোধ্য, দুর্নিবার যমুনার স্রোতে
তোমার মতন দরদী প্রেমকি কেউ নেই রক্ষাকর্তা আজ?

ক্ষমা নয়, অভিশাপ দাও পিতা!
সব শেষ হয়ে যাক, ধ্বংস হয়ে যাক
যমুনা ভাঙনে ভাগ্য খুলেছে যেসব প্রতারক রাজনীতিক
হার্মাদ-জলদস্যু-লুটেরা ঠিকাদার
ঘুসখোর চোর লম্পট পানি উন্নয়ন প্রকৌশলী ও কর্মকর্তা
লক্ষ মানুষের আর্তনাদ, চাপাকান্না, হাহাজার আর
দীর্ঘশ্বাস নিংড়ে নিয়ে যারা গড়েছে সুখ আর স্বপ্নের ইমারত
তাদের সব কিছু ভেঙে গুঁড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিক
লক্ষ কোটি বছরের অনন্ত ক্ষুধা আর পিপাসায়
ভয়ানক জলক্ষুব্ধ তীব্র তীক্ষè হিংস্র ক্রুদ্ধ ভয়াল
বিধ্বংসী খরস্রোতা জলজাঙ্গাল অক্টোপাস যমুনা
কামড়ে-ছিঁড়েখুঁড়ে, কুচি-কুচি করে চিবিয়ে চিবিয়ে
গোগ্রাসে ওদের গিলে খাক আমূল আগ্রাসী যমুনার
বিশাল আজদাহা-হা…

২২.০৪.০৫
পুরানা পল্টন,ঢাকা।