অবশেষে তুমি এলে
মাইক্রোফোন শোনাল সারাদেশে যুগলকণ্ঠের ধ্বনি।
ভীত প্রকম্পিত তুমি, কন্ঠস্বর প্রায় শোনা গেল না,
স্টুডিও নেয়ে গেল ঘামে, শ্রমিক-দুপুরে
আমার গল্পের মধ্যমণি ছিলে তুমি।

বিকেলের রোদে হেঁটে শাহবাগ, পাবলিক লাইব্রেরি,
আর্টস কলেজ হয়ে, সুবিখ্যাত রেসকোর্সে
যেখানে শেখ মুজিব সাতই মার্চের আর আমরা
বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ঘোষণা দিয়েছি
কার্লমার্কসের নামে।

যেখানে এখন উদ্যানের সমারোহ, পাশেই পুলিশ,
সন্ধ্যার সৌন্দর্য নেমে এল ঘাসে
মুখোমুখি হলাম আমরা আশ্চর্য সাহসে।
এমন মুহূর্ত আসে প্রতিটি মানুষ চূড়ান্ত
জিজ্ঞাসার সম্মুখীন হয়; প্রেম, প্রজ্ঞা, বোধ,
সংঘর্ষ, জীবন ও মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।

আমার চোখে সেদিন ছিল না সংশয় কোনো
কণ্ঠে জড়তার লেশ মাত্র, মনে পড়ে পষ্ট ঋজু
আবেগের অকম্পিত উচ্চারণ‘ভালোবাসি’।

মানুষ বলেছে অগ্নি ঝরে এই চোখে
ব্যথিত বকুলের মতো সেইদিন ঝ’রেছিল প্রেম।
নিষ্পলক তোমার চোখের তারা সপ্তর্ষির মতো
মুহূর্তে উজ্জ্বল হল। পৃথিবীর যে-কোনো বিজ্ঞান
নাম দেবে ভালোবাসা।

কিন্তু পরক্ষণে মধ্যবিত্ত আকাশের আলো
গেল নিভে। ভয়ে, আতঙ্কে, সন্ত্রাসে
ফ্যাকাশে তোমার ঠোঁট কেঁপে উঠল সজোরে,
গুলিবিদ্ধ হরিণীর মতো ‘না, না’ করে উঠলে

 হয় না, এ হয় না, আমি পারব না,
একজন অতৃপ্ত, অশান্ত, অস্থির, উত্তপ্ত,
দুর্বার কবির ভার নিতে অপারগ আমি।
আমি নগণ্যা, সামান্য, ‘ক্ষমা করো কবি;
ভালোবাসি, ভালোবেসে যাব অন্যভাবে চিরকাল,
যেখানেই থাকি।’ পৃথিবীর পলাতকা
সব প্রণয়ীর মতো সেই একই অভিন্ন অনুবাদ।
দিনে দিনে পৃথিবীর আয়ু কমে যাচ্ছে ক্রমে
শুধু তোমার স্মৃতির আয়ু কালক্রমে বাড়ে।
সেইসব ঘুমভাঙা একাকী দুপুর
কবিতার রাত, খামে ভরে রাখি জলভেজা মধুর সকাল
পদ্য, পঙক্তি, নীলচিঠি।

তুমি তো রয়েছ উর্বর সংসারে
প্রতিরাতে পতিরতি সুখে সন্তানসম্ভবা
আমি আজো সেই উদাসীন, উড়নচণ্ডীর মতো
পথে পথে বিরাগী বাউল। শুধু মাঝে এক
মায়াবিনী ভালোবেসে, কাছে এসে, বুকে নিয়ে, ফেলে রেখে
তোমারই মতো চলে গেছে দূরে-বহুদূরে।