‘হ্যাভ এ নাইস ডে’
হ্যাঁ, তোমার প্রত্যাশা দিয়েই শুরু করতে চেয়েছি দিনটি
ঘুম ভেঙে শীতের কাঁথার নিচে থেকেই তোমাকে
খুঁজলাম, না রেকর্ডিং নয় স্বয়ং তুমিইÑ
তুমি নও আমি, আমারই কণ্ঠস্বর ভেসে আসে
উত্তর গোলার্ধ থেকে আটলান্টিকের পাড়ে
আমারই রক্ত ইথারে ছড়িয়ে পড়ছে, আকাশে
বজ্র-বিদ্যুতের মতো একেকটি বিচ্ছুরিত শব্দ─
আমি কান পেতে থাকি আমারই বুকের স্পন্দন শুনতে
কোনো অমৃতই হয় না এমন সুমধুর!

ফুলের মতো একরত্তি মেয়ে তুমি কতো বড় হয়েছো?
কতো দিন দেখিনি তোমাকে, খিলখিল তোমার
হাসির ঢেউ শুধু উছলে ওঠে পদ্মা মেঘনা যমুনায়
দুইশত পঞ্চাশ বিলিয়ন রক্তে কী ভীষণ অনুরণন সৃষ্টি করে!

হায় কী অভাগা আমি! আমারই বুকের খিলানে
ঘুমিয়ে পড়তো মোমের পুতুল, আমারই হাত ধরে
সে যেতো স্কুলে, আমারই কাঁধে চড়ে সে চাইতো
আকাশ ছুঁতে, কলিং বেলের শব্দে সবচে আগে
যে ছুটে আসতো দরজায়, উল্লাসে মাথায়
তুলতো বাড়ি, একাত্তুরের যুদ্ধ শুনতো গভীর মনযোগে
ঘৃণায় কোনো পাকবস্তু কিনতো না দোকান থেকে, আনতে
দিত না বাড়িতে, আমার আঙুল তার পিঠে
সুড়সুড়ি না দিলে যে ঘুমাতে পারতো না এক রাত্রিও।

স্বপ্ন ছিল যার লাল বেডরুম আর দোতলা ঘুমাবার খাট
যে চেয়েছিল আমার কাছে একগাড়ি আইসক্রিম
সে এখন কোথায়? কতদূরে? কেমন হয়েছে সে?
আমারই মতো চোখ জ্বলজ্বলে রাগ খুব অভিমানী
ভীষণ আবেগী বন্ধু বৎসল মানুষের দুঃখে কাঁদে?
তার কি কোনো প্রেমিক আছে, হাত ধরে হাঁটে রাস্তায়
পার্কে বসে গল্প করে, ঘুরতে যায় সমুদ্রে, চুমু খায় নির্জনে?
তার বুকের ভেতর কি ভীষণ কষ্টের নোনাজল ঝড়?
এসবের কিছুই জানি না আমি, সাহস হয় না জিজ্ঞাসার
কেননা এসবই তো জানবার দায়িত্ব ছিল আমার
হায় ব্যর্থ জীবন! হা মহাঅপরাধী আত্মা।

আর কোনো দিন কি হাত ধরে যাবি তুই
একুশের রাতে শহীদ মিনারে, বাংলা একাডেমির
মেলায়, কিনবি ছড়ার বই কিম্বা মিকি মাউস?
যাবি রমনার বটমূলে পয়লা বৈশাখ
মঙ্গল শোভাযাত্রায় হাঙর কুমির বাঘ টিয়া
ময়ূর দেখে হবি হেসে কুটিকুটি, বায়না ধরবি মুখোশের?
আর কোনো দিন কি কবিতা উৎসবের মঞ্চের সামনে
হাজার হাজার মানুষকে মুগ্ধ করে দুরন্ত ঘূর্ণির মতো
দেখাবি পুতুল নাচ?

যমুনা ব্রিজ পার হয়ে কবে যাবি দাদুর কবরে
নিমগাছ তলা বসে দেখবি অদূরে যমুনার ঢেউ
সবুজ চা বাগান পাহাড় আর সুরমার কোল ঘেষে
কবে যাবি হাছন নগর? কান্নায় ভেঙে পড়বি
সোনার মানুষ নানুভায়ের চিরঘুমের পাশে
দাদি বা নানুপা বলে জড়িয়ে ধরার সৌভাগ্য
হবে কি তোদের আবার?

আর কোনো দিন কি ফিরে যেতে পারবো স্কারবোরো
ডোমিনিয়নের কেন্ডিগুলো আজও কি অপেক্ষায় আছে
মি. বিগ কি পথ চেয়ে চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে গোপনে
সিডার ড্রাইভ স্কুলের মাঠ সবুজ ঘাস সিøপার ইউক্লিপটাস
এখনো কি পথ চেয়ে থাকে প্রতিটি বিকাল?
আর কি দেখা হবে তোর প্রজাপতির মতো উচ্ছল বন্ধুদের সাথে?

‘হ্যাভ এ নাইস ডে’
তোমার প্রত্যাশা দিয়েই শুরু করতে চেয়েছি দিনটি
কিন্তু হে আমার দুখী মেয়ে হে আমার প্রাণের পুত্তুলি
তোমার দুর্ভাগা পিতার বুকভাঙা কান্নায় দেখো
কুয়াশায় ছেয়ে যাচ্ছে বাংলার প্রকৃতি
সকালের সূর্য ডুবে এখনি নেমে আসছে অন্ধকার
তোমার হতভাগ্য পিতার চোখের নোনা জলে
বঙ্গোপসাগরে ভেসে যাচ্ছে অশ্রæভেজা বাংলাদেশ।

০৬.০২.২০১২ সেগুনবাগিচা