আমার ধ্বংসের জন্যে
হে আমার সুদখোর পাওনাদাররা
তোমরাই দায়ী।
আমার শিউলি ঝরা সুপ্রভাত
মাটি হয়ে যায় তোমাদের মুখ মনে পড়ে,
তোমাদের ভয়ংকর হায়েনার চোখ
সারাক্ষণ ছায়ার মতোন পিছু হাঁচে।

পাগলের মতো আমি শহরময় এদিক সেদিক ছুটতে থাকি
টাকার পেছনে ঘুরতে ঘুরতে আমার দিনের চতুর্থভাগ কেটে যায়,
আমার নাওয়া খাওয়া আরাম বিশ্র্রাম ঘুম স্বস্তি শান্তি
সবকিছু বিসর্জন দিয়ে চরকির মতো ঘুরছি তোমাদের পাওনা মেটাতে।

তোমাদের পাওনা মেটাতে আমি প্রিয়জনদের নির্বাসনে পাঠিয়েছি
ভুলে গেছি মা ভাই বোন আত্মীয় স্বজনদের
বন্ধু বান্ধবী প্রেমিকা ভক্ত সাথী সবাইকে ছেড়েছি
বুলে গেছি রাজপথ, উত্তাল মিছিল
প্রিয় শব্দদেবী অভিমানে ছেড়ে গেছে আমাকে
কবিতা লেখার নির্জন প্রহর ভাললাগার মুহূর্তগুলো।

তোমাদের সুদখোর রক্তচক্ষু আমাকে শাসায়
বলে- টাকা ফেল্। কবিতা লিখে হবে না কিছুই
কবিতা কবে কাকে ভাত দিয়েছে?

হে আমার সুদখোর পাওনাদারগণ
দোখো আমি েেজগ আছি সারারাত, কিছুতেই ঘুমুতে পারি না
গুলিবিদ্ধ পাখির মতোন শুধু যন্ত্রণায় ছটফট করি
কেননা ভোর হলেই দেখা হবে তোমাদের সাথে
টাকার তাগাদায় অস্থির করে তুলবে
ফোনের পর ফোন আসবে সুদ তোলার দিন এলেই
চলে আসবে অফিসে, যাচ্ছে তাই বকাঝকা করবে

সময় মতোন সুদ না পেলে।
কিন্তু আমি দ্বিগুণ পাওনারদার হয়েও
আমার দেনাদারদের তেমন কোনো শক্ত কথাই বলতে পারি না,
বরং যখন আমাকে তারা দেশের অর্থনৈতিক দুরাবস্থার চিত্র তুলে ধরে
তাদের ব্যবসার দুর্দশার বর্ণনা করে আমি সহজেই গ’লে যাই
একটি কঠিন বাক্যও বলতে পারি না, বরং ইচ্ছে করে
তাদের আরো কিছু টাকা দিয়ে আসতে
এইভাবে আমি অর্থ আদায়ে ব্যর্থ হতে হতে
তোমাদের কাছ থেকে টাকা ধার করে মাসে মাসে
৬০% হারে সুদ দিতে দিতে আজ আমি দেউলিয়া হয়ে গেছি।

হে আমার সুদখোর পাওনাদারগণ
যাদব বাবুও লজ্জা পেতেন তোমাদের সুদ হিসেবের মুন্সিয়ানা দেখে
নীলকর ইংরেজরাও ভয়ে পালাতেন তোমাদের সুদ আদায়ের অত্যাচার দেখে
তোমাদের ক্ষমাহীন নির্দয় পাষণ্ড মন এতটুকু কাঁপে না যখন গুনে গুনে টাকা নাও
এই একবিংশ শতাব্দীতেও তোমাদের মধ্যযুগীয় ব্যবসা
আধুনিক মাফিয়াচক্রও বোধ হয় হার মানবে এ বর্বরতার কাছে।

হে আমার সুদখোর পাওনাদারগণ
জেনে রেখো, একজন কবিকে একজন জাতির বিবেককে
মওকা পেয়ে তিল তিল করে হত্যা করছো তোমরা
যে কোনদিনও ব্যবসায়ী হতে চায়নি, যে পা দিতে চায়নি
তোমাদের নির্দয় ফাঁদে। এই পুঁজিবাদী, বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার
নিরুপায় শিকার সে।

যে শুধু কবিতা লিখতে চায়, শিউলি ফোটা ভোর কিংবা
জোছনাপ্লুত রাত দেকতে চায়
নদী, নারী, ফসল, পাহাড়, ঝর্ণা
বনভূমি আর ভালবাসার
উপাসনা করতে চায়।

৪.৮.৯৯
ঢাকা