আমরা তোমাদের ভুলে গেছি
ভুলে গেছি তোমাদের হীরণ স্মৃতি।
মনে রাখবার মতন অতটা সময় কোথায়?
আমরা সবাই ব্যস্ত যে-যার ধান্দায়।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর যুগে কোনো মানুষেরই
আত্মোৎসর্গ আর বেশি স্পর্শকাতর নয়,
বেশিদিন কারো স্মৃতি ধরে রাখবার মানবিক
বোধ ক্রমশ লোপ পাচ্ছে আর চেতনা নামক
উচ্চমূল্যবোধ সে তো মধ্যযুগী আদর্শবাদ।
সকল কিছুই কম্প্যুটারের ডাটা অ্যান্ট্রি
প্রসেসে ঢুকে যাচ্ছে; কীবোর্ড আঙুল ছুঁলেই
হৃদয়ের পরিমাপ, মগজের সূ²াতিসূ², চেতনাফলক
দ্রুত ভেসে উঠছে উজ্জ্বল স্ক্রিনে দিন, ক্ষণ তিথি, লগ্ন,
স্মরণ, উৎসব হার্ডডিক্সে রেখে সুনিশ্চিত থাকা যায়।
মন-হৃদয়-চেতনা-অনুভূতি রাবীন্দ্রিক এইসব
ঝেড়েমুছে ফেলেইলেকট্রো আধুনিক হতে হবে আজ।
তোমাদের তাই আর মনে রাখতে পারছি না
হে প্রিয়, শহীদ সাথী ও বন্ধুরা;
স্মৃতি নামক পরাবাস্তব শব্দটি পরিহার করতে চাই।
তোমাদের বিদ্রোহী চোখ, প্রতিবাদী ঠোঁট
চিতাবাঘের মতন চিতানো বুকের ফিন্কি দেয়া রক্ত
বড়বেশি ডিস্টার্ব করে আজকাল।
তোমাদের রক্তছোঁয়া অঙ্গীকার
আজ আমাদের অর্থ-সম্পদ-ক্ষমতা
ঐশ্বর্য-প্রাচুর্যের বড়বেশি বাধা।
পুনরুত্থিত পুঁজিবাদ-মৌলবাদ-স্বৈরশাসনের
আধুনিক সৌরজগতে প্রবেশ করতেই হবে
তোমাদের মনে রাখা একেবারেই অসম্ভব।
তোমাদের ভাই, বোন, প্রিয় সাথী-সহযোদ্ধা
হৃদয়তমা নারী, স্বজন, বান্ধব
কারো পক্ষেই আর বছরের-পর-বছর স্মৃতি নিয়ে
কালক্ষেপণ সম্ভব নয়।
শুধুমাত্র তোমাদের গর্ভধারিণী মায়েরা
কোনোমতেই যাদের কম্প্যুটার-জগতে ঠেলে দেয়া যাবে না
শুধু তারাই দিনরাত অশ্র“পাত করতে পারবে আমৃত্যু।
আমরা তোমাদের ভুলে গেছি
ভুলে গেছি…
ভুলে গেছি…

নভেম্বর ৯২ ঢাকা