শহীদ খোকন, তোমাকে দেখিনি কখনো
শুনেছি নাম শুধু দেয়ালে ঝুলন্ত ফ্রেমবন্দি
সজীব তারুণ্যদীপ্ত তোমার মোহন প্রতিকৃতি
প্রলুব্ধ করে আবারও যুদ্ধে যেতে।

‘আমাকে একটি রাইফেল দাও’
পিতার সজল সানুনয় মাতার ক্রন্দনরোল
সকলি ছাপিয়ে ওঠে তোমার চেতনাভেদী
সেই দুর্মর দুঃসাহসী উচ্চারণ।

সেই ক্রুদ্ধ ক্ষুব্ধ দুর্বিনীত মহান আকুতি
বুঝেছিল একজন প্রিয় বড়বোন
নিজহাতে তুলে দিয়েছিল আত্মরক্ষার জন্যে কেনা
লাইসেন্স-করা নিজস্ব রাইফেল
শত্র“-নিধনের মহামন্ত্রে উদ্বুদ্ধ মহান হৃদয়া।

তুমি ছুটে গিয়েছিলে চুয়ান্ন হাজার বর্গমাইল মৃত্যু-উপত্যকায়
তুমি আর ফিরে আসোনি ঘরে আক্কেলপুরের
বধ্যভূমিতে শুয়ে আছ হে তরুণ অমর শহীদ।

কী পৈশাচিক উৎপীড়নে বেয়নেটে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে
হত্যা করা হয়েছে তোমাকে বলতে বলতে
এখনো শিউরে ওঠে কোনো কোনো প্রত্যক্ষদর্শীরা।

তোমাদের দলকে আশ্রয় দিয়ে খেতে দিয়ে
মিলিটারি ক্যাম্পে খবর দিয়েছিল
শান্তিকমিটির চেয়ারম্যান।

শহীদ খোকন, তোমাকে দেখিনি কখনো
তবু তোমার রক্তের শোধ নিতে নতুন প্রতিজ্ঞায়
দীপ্ত হয়ে উঠি আমরা এখনো যারা
বেঁচে আছি একাত্তরের মুক্তিসেনা
তোমাদের রক্তের ঋণের দায় কী ভীষণ যন্ত্রণায়
বিদ্ধ করে প্রতিদিন আমাদের দুঃস্বপ্নের শকুনির
আর্তনাদে কেঁপে উঠি।
যতদিন বেঁচে আছি যতদিন শোধ নিতে
পারব না যতদিন নিশ্চিহ্ন না করতে পারব
নরঘাতকদের এই রক্তধোয়া মাটি থেকে,
জেনে রেখো ততদিন তোমাদের মতো আমরাও
একবিন্দু শান্তিতে ঘুমাতে পারব না।

ডিসেম্বর ‘৯৪ ঢাকা