বহুদিন যাওয়া পড়েনি তোমার কাছে
তুমি নিশ্চয়ী খুব রেগে-মেগে আর কখনো

কথাই বলবে না এমন প্রতিজ্ঞা নিয়ে বসে আছ।
আমিও ভেতরে ভেতরে বাড়িপলাতক বালকের মতো
খুব ভীত এতদিন পর কীভাবে তোমার সামনে দাঁড়াব?

‘কেউ কি এমন নিষ্ঠুর পাষাণ হয়
এতটুকু খবরও দিতে নেই,
তীব্র অভিমানে বুঝি ফিরিয়ে নেবে মুখ
বাকরুদ্ধ কষ্টে টলমল কচুপাতা চোখ।

চুম্বকের মতো কাছে টেনে নিয়ে
গভীর আলিঙ্গনে বিরহের নীলসুতো কেটে
উড়াব চিরমিলনের ঘুড়ি।
এরকম স্বপ্ন কতদিন বুকে জমা
তবু আমার যাওয়া হয়নি তোমার কাছে।

নিমফুলের গন্ধ হয়তো ভরিয়ে তুলেছে তোমার চারিপাশ
চিরল পাতার ফাঁকে ফঁাঁকে খইয়ের মতন ফুটেছে সুপারির
বুটিবুটি ফুল জানালায় কৃষ্ণচূড়ার সবুজ পাতা পালক নাড়ছে
হাওয়ায় মৃদু-মদির জোছনায় ভেসে যাচ্ছে তোমার নির্জন বারান্দা
মনে পড়ে একবার এরকম অপূর্ব জোছনার ছাদে
খোলা আকাশের নিচে চাঁদ ও আকাশের মতো আমরাও
মিশে গিয়েছিলাম সবুজ গভীর অরণ্যে।

স্মৃতি অবিরত নদীর ভাঙনের মতো বুকের গভীর ক্ষত থেকে
ঝরায় তোমারই হাহাকারের রক্ত
তবু আমার যাওয়া হয় না তোমার কাছে।
তুমিই আমার ইপ্সিত গন্তব্য কিন্তু আমার চলার পথে পথে
পাহাড় সমান হিংস্র বাঁধা, কতিপয় জল­াদের
অশরীরী মোহাম্মদী বেগের প্রেতাত্মা।

গুলিস্তানের মোড়ে বিশাল কামান
কচুক্ষেতের সামনে ভয়ংকর ট্যাংক

রাস্তায় রাস্তায় মেশিনগান উঁচিয়ে জলপাই রং কনভয়
বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর
আকাশে উড়ছে বোমারু বিমান
আমি কোন্ দিক দিয়ে তোমার কাছে যাব?

আমার পায়ে পায়ে বন্দুকের নল
পলাতক ছায়ার পেছনে গোয়েন্দার সার্চলাইট
আমার নাওয়া-খাওয়া ঘুম-বিশ্রাম আশ্রয়
এক অস্থির উত্তেজনায় সন্ত্রস্ত।
তবু সমস্ত সন্ত্রাস উপেক্ষা করে
প্রতিদিন পথে পথে মুহূর্মুহু মিছিলের ধ্বনি
সমস্ত সশস্ত্র প্রতিরোধ ব্যূহভেদ করে বারুদের বিস্ফোরণ
অজানা আতঙ্ক কাঁপছে শহর বন্দর নগর।
প্রতিদিন গ্রেফতার হচ্ছে কেউ-না-কেউ বিদ্রোহী
খুন হচ্ছে কেউ-না-কেউ বিপ্লবী।

আমি তোমার কাছে যেতে চাই
আহা কতদিন পান করিনি তোমার চুম্বন সুধা
কতদিন মাথা রেখে ঘুমাইনি তোমার কোমল বুকে
কিন্তু এত মৃত্যু, এত রক্ত রেখে
আমার যাওয়া হয় না তোমার কাছে
যা ও য়া হ য় না…