মধু দা, তোমাকে আমার দেখার সৌভাগ্য হয়নি
যখন তোমার ক্যান্টিনে ভোরের ঝাঁক-ঝাঁক পাখি
নতুন সূর্যের জন্ম-যন্ত্রণায় অস্থির, তখন আমি মাত্র
স্কুলে, ক্লাস ভেঙে দিয়ে মিছিলে যাওয়ার অপরাধে
হেডমাস্টারের বেতের আঘাতে জর্জরিত ক্রোধ আর জেদে
প্রতিদিন মিছিলে যাওয়ার প্রতিজ্ঞায় প্রদীপ্ত কিশোর এক।

জাঁদরেল আইয়ুবী প্রতাপের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত জেগে-ওঠা
জনসমুদ্রের ঢেউয়ে মিশে একদিন পুলিশের
লাঠিচার্জে মাথা পিঠ কনুইয়ে জখম নিয়ে ঘরে ফিরে
টের পেলাম কে একজন জন্ম নিচ্ছে ক্রমশ আমার মধ্যে
আমাকে বদলে দিচ্ছে দ্রুত ভোরের সূর্যের মতো
জড়তা ভীরুতা ঠেলে সপ্রতিভ আর সাহসী
করছে মাটি আর মানুষের পূর্ণ-প্রেমে
আমার প্রথম প্রেম; আমার জননী জন্মভূমি।

মধু দা, তোমার কেতলিতে টগবগ ফুটছিল
পদ্মা মেঘনা যমুনা আর আমার বালক বুকে
দাউ দাউ দেশপ্রেমের আগুন।
তোমার ক্যান্টিন থেকে শুরু ঝড়ো হাওয়ায় আমি ঘর ছেড়ে বাইরে
স্কুলের ক্লাস ফেলে মিছিলে মিছিল থেকে রণাঙ্গনে উন্মত্ত ঝাঁপিয়ে পড়ি।

মধু দা, যাদের তুমি উদ্বুদ্ধ করতে সেসব সাহসী বীর
ফিরে এল বিজয়পতাকা আর বিশাল হৃদয় উঁচিয়ে
অথচ তারা কেউ আর ফিরে পেল না তোমাকে
কেউ আর শোনাতে পারল না সেই দুর্দান্ত বিজয়গাথা।
মধু দা, দুর্ভাগ্য দেখা হল না তোমার সঙ্গে
তোমার ক্যান্টিনে পা দিয়েই;
আমি চুপি চুপি সব কলাকৌশল নিলাম শিখে।
মধু দা, গোপনে তুমিই আমাকে
প্রকৃত পথের সন্ধান দিয়েছ
তোমার দুয়ারে পা দিতেই শুনলাম
তোমার উদাত্ত কণ্ঠস্বর
এই যে, এদিকে এসো, শোনো।

মধু দা, তোমার গরম চায়ের কাপে ফুঁ দিতে দিতে
আমরাও অবাঞ্ছিত শাসন শোষণ আর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে
বারবার মাথা উঁচু করে বুক চিতিয়ে নিঃশঙ্ক চিত্তে দাঁড়িয়েছি।
মধু দা, তোমার সামনের খোলা জমিনে রক্তাক্ত লাশ রেখে
বারবার প্রতিজ্ঞা করেছি মৃত্যুর আতঙ্ক ছড়ানো বিভীষিকাময়
দুঃসময় তাড়াবার, প্রতিবার তোমার ক্যান্টিন থেকে যাত্রা শুরু হয়।

মধু দা, তুমি তো মধুর ক্যান্টিন নয়; গড়ে গেছ বাঙালির বিজয়ের
সূতিকাগার; জ্ঞান মেধা মনীষা হৃদয় আর চেতনার পাঠশালা।

মধু দা, কে বলে তুমি নেই?
প্রতিদিন তাজাফুল ঘেরা ফ্রেম থেকে নেমে এসে
স্বাগত জানাচ্ছ নবাগত প্রজন্মকে
তর্জনী উঁচিয়ে বলছ যাও, জ্ঞানসমুদ্রে অবগাহন করে
অনাগত সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাও।