নির্বোধ শব্দটি প্রত্যাহার করে নিচ্ছি
তুমি নও, এ শব্দটি অভিধানে
যথার্থ প্রয়োগ হয়েছে আমার জন্য শুধু।

সেই কোন এক কার্তিকের বাদামি বিকেল
পুরান ঢাকার ঘুপচি গলির রোঁয়া ওঠা দোতলা
সামরিক সময়ের কঠিন নজরদারী এড়িয়ে
ঠিক ঠিক খুঁজে নিয়েছিলে পলাতক গোপন আশ্রয়

বিজয়ানন্দে তোমার চোখ ছিল ছলছল
যেন উপচে পড়ছিল আষাঢ়ের পূর্ণনদী
সে চোখ বিস্মিত চোখ বলেছিলামÑ নির্বোধ

অপমানে না আনন্দে তোমার দু’চোখ আরো
উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল ঝলমল চৈত্রের মতো
বুঝতে পারিনি! ধীরে ধীরে চন্দ্রগ্রহণের মতো
একদিন আমাকে সম্পূর্ণ গ্রাস করে নিয়েছিলে
মোমের মতো গ’লে গ’লে আমরা নতুন
চন্দ্র আর সূর্য জন্ম দিয়েছিলাম।

যেহেতু আমার রক্তের ভেতরে তিতুমীর শরিয়তউল্লাহ
সিরাজ সুভাস ফরহাদ প্রাণের গভীরে চে গুয়েভারা
ক্যাস্ত্রো মস্তিষ্কের কোষে কোষে মার্কস লেনিন
হৃদয়ে রবীন্দ্র নজরুল জীবনানন্দ নেরুদা লোরকা
কোনো মতেই আমাকে তাই বন্দি করা গেল না সোনার খাঁচায়
মেঘ বজ্রবিদ্যুৎ ঝড়ের ডাক অরণ্যের হাতছানি
বারবার আমাকে ঘরছাড়া করে।
ভীষণ আকাক্সক্ষার রাতগুলো কেঁদে কেঁদে ডুকরে ওঠে।

নিরুপায় তুমি নিরাপদ স্বর্গ সুখের সন্ধানে
পাড়ি জমিয়েছো নয়নাভিরাম প্রপাতের দেশে
তোমার আঙুলের ফাঁক দিয়ে উড়ে যাচ্ছে
থোকা থোকা মেঘ আপেল বাগানে গড়িয়ে পড়ছে
শিলাবৃষ্টি, হা করলেই মুঠো মুঠো টসটসে আঙুর
লাফিয়ে পড়ছে মুখে।

মাইলের পর মাইল তুষারতুলার ভেতর দিয়ে
ছুটে যাচ্ছে তোমার নতুন সোলার কেমব্রি
ভীষণ বাইসন খেলায় সুখ আর আনন্দে উপচে পড়ছে
রক্তরেণু নদী ও পাহাড়ের উপাখ্যান এখন মৃত বালিয়াড়ি
দুখিনী বাংলার কিষান কিষানির গান এখন
কেবলই মধ্যরাতের করুণ সিম্ফনি।

কেউ বেঁচে থাকে নিজের আনন্দে নিমগ্ন নিসর্গে
কেউ বেঁচে থাকে উত্তাল সমুদ্রের গর্জন বুকে
মহাপ্রলয়ের ধ্বংসের ভয়াবহতা কাঁধে
অসহায় বিপন্ন মানুষের পাশে
কারো জীবন সিএন টাওয়ারের শীর্ষ
কারো জীবন সান্তিয়াগোর প্রচÐ ঝোড়ো সমুদ্র

নির্বোধ শব্দটি আজ প্রত্যাহার করলাম তোমার কাছ থেকে।

০৩.০২.২০১২ সেগুনবাগিচা