পলাশডাঙায় ফুটেছিল লাল পলাশ
একাত্তরে ছড়িয়ে আগুন বিশ্বময়
সেই আগুনে ঝলসে ওঠা বাংলাদেশ
সেই আগুনের আরেক নাম লতিফ মির্জা! মির্জা লতিফ!
পাহাড় সমান শৌর্যবীর্য, আকাশ-অসীম শক্তি-সাহস
স্বৈরতন্ত্র, শাসক-শোষক, রক্তচক্ষু, বুলেট-বেয়নেট, জেল-জুলুম
পেরেছে কি নুইয়ে দিতে উত্তোলিত বজ্রমুঠি, গগনশিরীষ উঁচুমাথা?
লতিফ মির্জা! মির্জা লতিফ! বাঘের বাচ্চা ভয় করেনি
হাজার কোটি লক্ষ সাহস একাই বুকে রাখত পুষে!
সব লড়াইয়ে, সবখানে ছড়িয়ে পড়ত দাবদাহ
অগ্নিপ্রভ; আগ্নেয়গিরি গণবিস্ফোরণে উন্মিলিত
গণনেতা, গণমানুষের নয়নমণি, গণনায়ক, রাজাধিরাজ
এই বাংলায় জন্মেছিল হাতেগোনা যে দু’একজন
তুমি তাদের অন্যতম; লতিফ মির্জা! মির্জা লতিফ!
জন্মাবে কি হতভাগা এই মাটিতে ফিরে আবার?
ছিল না তোমার রাজপ্রাসাদ, প্রাডো কিংবা লেকসাস
জীর্ণ ছাদের দীর্ণ জীবন, লুঙি-পাঞ্জাবি, পায়ে হাঁটা, রিকশা-চলা
মুটে-মজুর, চাষা-ভূষা, ধোপা-নাপিত, কামার-কুমার
মুচি-মেথর, চাড়াল-চণ্ডাল, ফকির-ফাকরা, হরিজন
তুমি ছিলে তাদেরই নেতা! নও তো তুমি তথাকথিত
তকমাআঁটা জননেতা; তুমি ছিলে প্রকৃত অর্থে
গণমানুষের হৃদয়জয়ী জননেতা পরানের গহিন ভেতর
এই সময়ে এই মাটিতে তোমার মতন ক’জন আছে?
যমুনা পাড়ের শার্দুলমাঝি, হাওর-বাঁওড়, বিলে-ঝিলে
আন্ধার রাইতে মশাল জ্বেলে গাজী গাজী তোমার নৌকা
ভাসিয়েছিলে সাত সমুদ্রের দিকচিহ্নহীন সুদূর পাড়ে
পৌঁছে যাওয়ার অদ্যম এক স্থির-সংকল্পে!
এই অবেলায়, কুজ্ঝটিকায় মাঝ-দরিয়ায় নাওয়ের মাঝি
মির্জা লতিফ! লতিফ মাঝি! কোথায় তুমি হারিয়ে গেলে?
মোহনপুরের মাটির ঘরে ঘুমিয়ে কেন স্বপ্নচারী
জাগো তুমি, জাগো মাঝি এই অবেলায়
ঘুমিয়ে থাকা তোমার সাজে?

০৯ সেপ্টেম্বর ২০০৮, পুরানা পল্টন