বন্ধুগণ, প্রাণীকুলের সবচে ধূর্ত প্রাণী
শৃগালের গল্প কমবেশি আপনারা সবাই জানেন।
আমাদের স¤প্রচার কেন্দ্রে প্রতিদিনই সেই
কুল-রতœ হুক্কা…হুয়া…হুক্কা…হুয়া তার মূল্যবান বাণী
পৌঁছে দেন: গ্রামে গঞ্জে, মাঠে প্রান্তরে এমনকি সারাবিশ্বে,
যার মর্মার্থ দাঁড়ায় আমিই শ্রেষ্ঠ, শিরোমণি জীবজগতে।’

প্রতিদিন খবরের কাগজের প্রথম পাতায়
ছাপা হয় তার ত্রিকোণাকৃতি মুখের আদল,
দাঁত ভেংচি রঙবেরঙের পোস্টারে ঝুলে থাকে দেশময়,
এই মুখই এখন আমাদের জাতির প্রতীক কি না!
কেননা, আমরা শতকরা পঁচানব্বই ভাগ সমর্থনে
ম্যাকেয়াভেলির মতানুসারে একজন যোগ্যতর
শাসক নির্বাচন করতে পেরেছি নিঃসন্দেহে।

বন্ধুগণ, আপনারা অবগত আছেন যে,
তিরিশ লক্ষ রক্ত, দুই লক্ষ ইজ্জতের
কাফ্ফারায় আমরা স্বাধীনতা নামক এক
‘সোনার হরিণ’ লাভ করেছি; আর স্বাধীনতার
সুরুয়া ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্যে একটি
জাতীয় ‘পশু-পাখি পালন খামার’ তৈরি করেছি।
প্রতি পাঁচ বছরে সেখানে জাতীয় পশু
উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়, বিশেষত
কিভাবে পশুপাখিদের ভক্ষণযোগ্য করে তোলা যায়
আর কীভাবে বেয়াড়া পশুদের দমন করা যায়
ইত্যাদি বিষয়ে জাতীয় বাজেট ধার্য করা হয়।

বন্ধুগণ, আপনারা বেশ ভালো করেই জানেন যে,
শৃগাল চিরকালই হাঁস-মুরগি-পশু-পাখি-পাগল প্রাণী,
কিছুতেই লোভ সামলাতে পারে না সে
রাতবিরেতে গৃহস্থের বাড়িতে হানা দেয় সুযোগ বুঝে,
অবশ্য আমাদের বর্তমান শৃগালপ্রধান একটু ব্যতিক্রম।
সেই-যে রঙ মেখে সঙ সেজে এক শেয়াল
নিজেকে বনের রাজা দাবি করেছিল,
সেরকম আমাদের তিনিও প্রাণীকুলের
ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।
কিন্তু বনের বাঘ, সিংহ, এমনকি বনবেড়ালও
শেয়াল মশাইকে বনের রাজা মেনে নিলেন না,
নিরাপত্তার ভয়ে কতিপয় হাঁস-মুরগিও
যোগ দিলেন বিদ্রোহীদের দলে;
শৃগাল-প্রধানের শাসন মেনে নেবে না কেউ।

ভারি বিপদগ্রস্ত হলেন স্বঘোষিত কুল-পতি
অনুগত ভল­ুক ও বাঁদর লেলিয়ে দিলেন বিদ্রোহীদের ওপর।
আর টোপ দিলেন হঁাঁস-মুরগিদের আণ্ডা পাড়ার
সুবর্ণ সুযোগের, ফল হল আশাতীত।
একদিন গভীর রাতে প্রাণীসকলের সঙ্গে
অঙ্গীকার ভঙ্গ করে ভারী নিতম্ব দোলাতে দোলাতে
পাক্… পাক্…কক্…কক্… করতে করতে
একদৌড়ে শৃগাল-প্রধানের চকচকে লোভাতুর
আলিঙ্গনে ধরা দিল।

কিন্তু বন্ধুগণ, শৃগালপ্রধান তখন
কুমিরের বাচ্চা দেখালেন সকলকে,
তবু আণ্ডা-পাড়া হাঁস-মুরগি নিজেদের
ভবিষ্যৎ পরিণতি জেনেও প্রতিদিন মোলাকাত
করছে শৃগাল-প্রধানের সঙ্গে পশুপালন ভবনে।

শৃগালপ্রধান আপাতত বেশ নিরাপদ মনে
করছেন সবকিছু, অতি স¤প্রতি তাই তিনি
তার সুখের রাজত্বের ঢাক বাজাতে
এক কাব্যসন্ধ্যার আয়োজন করলেন শৃগালীয়
কবিতা উৎসব প্লেটোর কবি বিরূপতা
মিথ্যা প্রমাণ করার জন্যে পৃথিবীব্যাপী আমন্ত্রণ
জানালেন তিনি কবিদের।

শৃগালপ্রধান পশুপাখি ভক্ষক নন : কবি
সারা দুনিয়াকে সেটা প্রমাণ করাও অতি জরুরি।
কৌতূহলী আমন্ত্রিত অতিথিরা
কেউ কেউ এলেন সেটা উপভোগ করতে,
কিন্তু নিজ অরণ্যের একজন কবিও যোগ দিল না
সেই উৎসবে, কতিপয় অনুগত চামচিকে ব্যতিরেকে।

যথাসময়ে কনক প্রদীপের আলোকে আলোকিত
কাব্যমঞ্চে পৃথিবীর নবীনতম কবি (গোবী)
শেয়াল মোহাম্মদ উপস্থিত হলেন :
পিনপতনের-শব্দ নীরব ঘরে
হঠাৎ শোনা গেল হুক্কা…হুয়া…হুক্কা…হুয়া…

চমকে উঠলেন অভ্যাগত অতিথিবৃন্দ
পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন
কে একজন বললেন
‘এ কোন খেঁকশেয়ালের দেশে এলাম।’