সকলের জন্য যাদের জীবন
কমই নিজের প্রতি নিজের ঘরের প্রতি
প্রিয়জার প্রতি মনোযোগী।
তবু আজ আমি নিজের ভেতরে নিজে
দেখে নিই, দেখে নিই আত্মআয়নায় আপনার কায়া।

না, সেখানে আমি আমার নিজস্ব প্রতিকৃতি
কোনো খুঁজে পেলাম না বরং কী আশ্চর্য
গোটা ফ্রেম জুড়ে তোমারই ছবি।
কিন্তু তোমার মুখের কাঠামো ব্যতীত
আর কিছুর সাদৃশ্য নেই।

যেদিন তোমার সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎ-ভনিতা
সর্বাগ্রে আমার বুকের কাঁপন তুলেছিল
তোমার গভীর নক্ষত্র-গ্রথিত চোখ
তোমার সলাস্য প্রাণবন্ত হাসি
চিবুকের গাঢ়তিল
সুঠাম সৌন্দর্যমুগ্ধ বলেছিলাম‘কবিতা আপনি’।
আজ সেই বিকীর্ণ লাবণ্য কোথায়?
সেই জ্বলজ্বলে দৃষ্টি?

তুমি আজ শীর্ণ নি®প্রভ করোটি
গাঢ় কালিমায় ঢাকা চোখের সকেট
কোন্ অভিমানে ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাও?

আজ আমি নিজেকে নিজের মধ্যে
দেখে নিই; আত্মআয়নায় তোমার বিষণœ মুখ।
আসলে তোমার প্রতিবিম্ব আমি,
আমার বিম্বন তুমি।
তাই আমার সকল আচরণ ফুটে ওঠে তোমারই অঙ্গে
তোমার স্বরূপ উদ্ভাসিত আমার হৃদয়।
বায়োস্কোপ নয়, যাত্রা নয় মহাসত্য ঘটনা :
একদা এক মর্মান্তিক মানবিক দুর্ঘটনায় মুখ থুবড়ে পড়েছিল
এক ভিখারি কতিপয় নগর-কাকিনী ঠুকরে ঠুকরে
খাচ্ছিল হৃৎপিণ্ড তার, সহসা জীয়নকাঠি
হাতে এক রাজকন্যা তুলল জীবিত করে তাকে।
চোখ মেলে রাজকন্যার রূপমুগ্ধ ভিখারি
প্রণয় ভিক্ষা চাইল রাজকুমারীর কাছে
‘ভালোবাসার কাঙাল আমি প্রেমভিক্ষা দাও,
তোমার প্রেমের পরশ বিনে বাঁচব না আমি।’
রাজকন্যা দয়াবতী, প্রেমপূর্ণা প্রেমাস্পদকে
প্রত্যাখ্যান করতে পারল না যেই হোক সে।

এইভাবে আমাদের শুরু
আজ আমরা একসঙ্গে ঘর করছি।
কিষান-কিষানীর যৌথ খামারের পরিকল্পনা
কিন্তু আমি একজন গোত্রপ্রধানের মতো
শারীরিক বল ও শ্রম-পার্থক্যের হেতু
তোমাকে সরিয়ে রাখি মাঠ থেকে দূরে
শুধু উননের আঁচে তাতানো জীবনে।
খরা ও দুর্ভিক্ষের নামে খুব চিন্তাক্লিষ্ট ভাবলেশহীন
ভাব প্রদর্শন করি যেন বা আমার সঙ্গে
কাজ ব্যতিরেকে অন্য কোনো কথা বলা যাবে না।

এইভাবে নিঃসঙ্গতায় একা একা
তোমার পাঁজরে জমে ওঠে অভিমানী মেঘ
অক্টোপাসের মতন নৈঃশব্দের গুমোট
শ্বাসরোধ করে জীবনের।
অব্যক্ত ব্যথায় বেদনায় তিলে তিলে
মৃত্যুপথযাত্রী; মুমূর্ষু তোমার প্রাণ।

অথচ আমি কী নৈর্ব্যক্তিক চাষাবাদে
নিজেকে আড়াল করে রাখি অজানা রহস্যে।
আমার অযতœ-অনাদর-অবহেলা আজ তাই
মূর্ত হয়ে ওঠে তোমার সর্বাঙ্গে, প্রতিদিন আমার
দুর্ব্যবহার নিষ্ঠুরতা প্রকৃতির ক্যামেরায়
ধরা পড়ে তোমার আদলে।

আমি নিজেকে একজন মার্কসবাদী সমাজতান্ত্রিক
দাবি করি কিন্তু একজন মার্কস কিম্বা একজন লেনিনের
কথা ভুলে যাই, ভুলে যাই জেনী কিংবা স্ক্রূপস্কায়ার কথা।
তাই আজ আমি নিজেকে নিজের কাছে
আত্মোপলব্ধির ধারায় অপরাধী সাব্যস্ত করছি;
এই অপরাধের যে-কোনো দণ্ডাদেশ মাথা পেতে নিতে
তোমার এজলাসে হাজির হয়েছি
মাথানত করে দাঁড়িয়ে আছি
নিজেকে সংশোধন করার আর্জিনামা নিয়ে;

আমাকে কী শাস্তি দেবে দাও।