প্রিয় উইনি, তোমাকেই নিবেদন করি এই পঙক্তিমালা,
একমাত্র শব্দই কবির হৃদয়বাহন।

একটানা সাতাশ বছর
নিষ্ঠুর নির্মম কারাগারে বন্দি
কয়েদির জন্যে এরকম দীর্ঘ প্রতীক্ষা
আমার আর জানা নেই।

প্রতীক্ষাই পৃথিবীতে সবচে কষ্টের তবু সেই কষ্টের
কী বিশাল সমুদ্র তুমি পাড়ি দিয়েছ
ওগো কালো মেয়ে!

যখন দণ্ডিত হয় কোনো মানুষ মূলত প্রকৃতিই
নীল আকাশ চলিষ্ণু মেঘমালা আর সোনালি নক্ষত্র
বাতাসের স্বাভাবিক গতি পুষ্প ও পাখি বন্দি হয়ে যায়।

উইনি, মান্দেলা একা তো খাটেনি শ্বেতাঙ্গ গারদ; খেটেছ তুমিও সঙ্গে
দশসহস্র দিন তো প্রায় তিল তিল যন্ত্রণায় কালো মেয়ে
হয়ে গেছ নীল।

আফ্রিকাকে বুকে ধরে মান্দেলার স্নায়ুগুলো মজবুত গ্রানাইট
আর হৃদয়-গভীরে পুষে সেই মান্দেলাকে
কী ভীষণ রক্তপাত কোমল তোমার বুকে।

প্রতিটি বসন্তে ফুটেছে অগণিত ফুল ভ্রমরের মধুর গুঞ্জনে
মুখরিত হয়েছে পুষ্পিত বাগান
উইনি গো, সাতাশ বছর শুধু বসন্ত আসেনি তোমার বাগানে
আসেনি কোকিল কালো ভ্রমর
সাতাশ বছর চৌচির মাটির মতন তৃষ্ণার্ত তোমারই কালো ঠোঁট
অপেক্ষার প্রহর গুনেছে নতুন ভোরের নব বসন্তের
বোথার কঠিন প্রাচীর কি একবারও ওঠেনি কেঁপে
তোমার দীর্ঘশ্বাসে?

আহা রে উইনি, আজ যখন বাজল মিলনের বাঁশি
ধ্বনিত মুক্তির গান, সারা পৃথিবীর মুক্তিপাগল মানুষ
ফেটে পড়ল আনন্দ-উল­াসে
হাহাকারে ভরে ওঠে শুধু তোমারই হৃদয়।

আহা লো উইনি সোনা, ফিরে কি আসবে আÍ
সাতাশ বসন্ত আগের মধুর মুহূর্তগুলো….
ফিরে কি পাবে ফের প্রথম যৌবনের সেই উন্মাদনা?
চিরদুঃখী কালো মেয়ে
পৃথিবীতে এতটা বিরহে দগ্ধ আর কাহার হৃদয়
এতটা আগুনে পুড়েছে কার লাল ভালোবাসা?

‘৮৯ ঢাকা