যে দেশে কে কীভাবে সরকার হয়
সেটা প্রশ্ন নয়, সরকারি চাকুরিই মুখ্য;
বড় লোভনীয়, লাল টুকটুকে রাঙা বউ-এর চেয়েও।

এবং একবার তা লাভ করার পর যেন
সত্তুর-হুরীর স্বর্গ হাতে পাওয়া হয়।

অতএব যেভাবেই হোক ধীরে ধীরে প্রমোশনের
পিছলা-সিঁড়ি বেয়ে ডাকসাইটে আমলা হওয়াই প্রাণান্ত প্রচেষ্টা।
অধিক উৎকোচে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তোলো বেনামী ব্যাংক
অ্যাকাউন্ট, বনানী বা গুলশানে মনোরম লেক ও বাগান-ঘেরা
একটি প্রাসাদ, মার্সিডিজ লেটেস্ট মডেল, হাওয়াই কিংবা অক্সফোর্ডে
তনয়-তনয়ীর উচ্চশিক্ষা, অবসর জীবনের সর্বআয়োজন সুসম্পন্ন করা চাই।
গোল­ায় যাক নীতি, আদর্শ ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।’

সেজন্য যা-কিছু প্রয়োজন করা চাই
বিশেষত মাননীয় সরকার বাহাদুর যা-কিছু ফরমান

বিনাবাক্যব্যয়ে আলবত লেজ নেড়ে আনন্দে গদ্গদ হই।
বড়কর্তা-বস্, পিঠ চাপড়ে দিলেই প্রমোশনের লালমূলা
দুষ্ট বালকের মতো জিভ নেড়ে দেবে।

আদপে যে যাই বলুক আমরা হলেম সরকারি চাকুরে
অর্থাৎ কিনা সরকারি চাকর, নফর, ভৃত্য যে নামে ডাকো।
যে-কেউ ওই নাম ধারণ করুন আমাদের আপনার জন,
আমাদের বহুশ্র“ত সেবা তাঁর প্রাপ্য।

আসলে আমরা কোনো ব্যক্তি গোষ্ঠী নয়, ওই শব্দকেই পুজা করি
অতএব যে-কেউ বেওয়ারিশ কিংবা বেশ্যার দালাল, রাজাকার
তার পদসেবা আমাদের একমাত্র কর্তব্য-কঠিন-ব্রত,
চোখ কান বন্ধ করে, মুখ বুজে আমরা দায়িত্ব পালন করছি
কোন হুলুস্থুল, সরকারবিরোধী ভূমিকায় আমাদের রা নেই
যদি না-সে আমাদের কতিপয় নির্দিষ্ট সুযোগসুবিধার
বাধা হয়ে দাড়ায়।

যদিও গণপ্রজাতান্ত্রিক সিলমারা সংবিধান
তবু জনগণের সেবায় নিয়োজিত থাকা আমাদের
কর্তব্য নয়, বরং আমরা বড়ই অনুগত সরকার নামক
শর্করা শব্দটির প্রতি।

কেননা ওই শব্দটিই আমাদের বৌ-বাচ্চা,
স্ত্রী-সঙ্গম, সুখ-সম্পদ, ইহকাল, পরকাল,
ওই শব্দটির পদলেহনই আমাদের একমাত্র ধর্মকর্ম।

ওই শব্দের শৃঙ্খলে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা
আমাদের সর্বসত্তা, এমনকি জন্মনিয়ন্ত্রণ
বড়ি-কনডম ‘রাজা-মায়া’ আমদানি করে আমাদের
প্রজননক্ষমতার অক্ষমতা ঢেকে রাখার
ভেড়েণ্ডা বাজাতেও আমরা মহাখুশি।
স র কা র
স র কা রি
স র কা রি
চা কু রি

পর-নারীর মতন কার না লোভের বস্তু?
চাকরগিরি-এই চা-কর-জীবী পেশা
লুফে নিতে আজ বিসিএস উত্তীর্ণ হচ্ছে
সেরা সেরা ছেলে-মেয়েরা (পাকিস্তান আমলে
ই. পি. সি. এস. আর. সি. এস. পি. হয়েছিল
তাদের দোর্দণ্ড প্রতাপে আজো কাঁপে বাংলার মাটি)।

এই মর্মান্তিক লোভনীয় চাকরগিরির
পদোন্নতি লাভে বস্ বা বড়কর্তার
বেডরুমে আমাদের যুবতী স্ত্রী কিংবা কন্যা,
শ্যালিকা কিংবা ভগিনী
পাঠিয়ে আমরা বড়ই পুলকিত হই।
এমনকি মধুর হাসিতে তাদের রক্তাক্ত ফিরে আসাকে
স্বাগতম জানাই, ‘বস্, বড়ই অমায়িক, বড়ই
আন্তরিক তাই না?’

এমনকি ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় নীতিমালায়
সরকারি চাকুরি লাভের ও পদোন্নতির
বিশেষ যোগ্যতা হিসেবে এইসব গুণাবলী
বিবেচিত হলে আমরা বড়ই
ধন্য হব। এমন সদাশয়, দয়াবান
চাকরবৎসল মহামান্য সরকার মহাশয়ের
শ্রীচরণে জানাব শতসহস্র চিরন্তন প্রণাম।