আমার মা ছিলেন চাঁদের কণার মতন রূপসী
যে কারো নজর কাড়ার মতন আকর্ষণীয়।

পঞ্চাশ বছর আগে আমি যখন কিছুটা বুঝমান
মা তখন যৌবনবতী কী সুন্দর মাথার ওপরে মৃদু ঘোমটায়
নিজেকে শালীন করে রাখতেন ঘরে বা বাইরে
মা ছিলেন আশেপাশে দশ গ্রামের সবচে কুলীন রমণী
কিন্তু আমি কখনোই মাকে বোরকা হিজাব পরতে দেখিনি।

মা আমার এখন সত্তরোর্ধ্ব শীর্ণকায়
গুটিসুটি চামড়ায় বয়সের জীর্ণজরা
ছানিকাটা চোখ দ্যুতিহীন ঠোঁট চিরে উঁকি দেয় দাঁত
বুকে জড়িয়ে ধরলে হাড়গোড় ছাড়া আর কিছুই পাই না টের
কান্নায় ঝাপসা হয়ে আসে চোখ হু হু করে ওঠে বুক
মা, মা গো গর্ভধারিণী কত দুঃখ কষ্ট আঘাত না দিয়েছি।

সময়ের চাকায় নিপিষ্ট মলিন আমার মা
এখন বোরকা হিজাব ছাড়া যান না বাইরে
এমন কি নিকটজনের সামনেও টেনে টুনে
ঢেকে রাখেন নিজেকে।

আমি বলি মা, এ বয়সে কে তোমাকে নজর দেবে
কেন এত রাখ-ঢাক তোমার সবার কাছে?
মা হাসে, বাবা রে সময় পাল্টিয়ে গেছে দেখো না
কত কম বয়েসী মেয়েরাও এখন কতটা পর্দানশীন।

আমি অবাক হয়ে ভাবি মা আমার কত আধুনিক
সময়ের সাথে পা মিলিয়ে চলে
সত্যি সময় বদলে গেছে, ত্রিশ বছর আগেও স্কুল কলেজ
বিশ্ববিদ্যালয় পথে ঘাটে এত বোরকা হিজাবের
ছড়াছড়ি ছিল না, দুরন্ত তারুণ্য তেজ মেধা আর
মননের ঝলকানি ধর্মের খোলসে আজ ঢেকে যায়

ভাবি, কীভাবে অসাম্প্রদায়িক মুক্তিযোদ্ধার মাকেও
গ্রাস করে ধর্ম ব্যবসায়ীরা কী সুকৌশলে
বেড়ে ওঠার সূতিকাগার ঘর আর বিদ্যাপীঠের
চোখ কান নাক কেশ ঢেকে দিচ্ছে অমাবস্যার
নিকষ অন্ধকারে।

৩০.০১.২০১২ ইস্কাটন গার্ডেন